গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা |
Benefits Of Eating Saffron During Pregnancy–গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা
একজন মহিলার মানসিকতা এবং সুস্বাস্থ্যের একটা বড় পরিবর্তন দেখা যায় গর্ভবতী অবস্থায় | তাই জাফরান গর্ভাবস্থার খুবই উপকারী | কারণ জাফরান গর্ভাবস্থায় একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে ও এই সময় যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা মোকাবেলা করতে সাহায্য করে এর ভীতর কিছু ঔষধি গুণাবলী থাকার কারণে | গর্ভাবস্থায় মহিলাদের উদ্বেগ, স্ট্রেস ও পেট ব্যথা জনিত সমস্যা দেখা দেয় যা জাফরান খাওয়ার মাধ্যমে মোকাবেলা করা সম্ভব | এবং এর জন্য বিভিন্ন ডাক্তারপরামর্শ দিয়ে থাকেন জাফরান খাওয়ার জন্য | তবে কোনকিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক না | ঠিক তেমনি গর্ভাবস্থায় যদি জাফরান পরিমাণমতো খাওয়া না হয় তাহলে তাতে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে | তো চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা (Benefits Of Eating Saffron During Pregnancy) ও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সর্ম্পকে বিস্তারিত |
জাফরান কি বা কাকে বলে (What Is Saffron)?
জাফরান হচ্ছে একটি ইংরেজী শব্দ | জাফরানের ফুলের পাপড়ি বেগুনি রঙের হয়ে থাকে | জাফরানের ফুলটিকে ক্রোকাস সেটিভাস বলা হয় | জাফরান হল ক্রোকাস সেটিভাস নামক ফুলের শুকনো শিস বা গর্ভমুণ্ড | মাত্র 1 পাউন্ড বা 450 গ্রাম জাফরান তৈরি করার জন্য 50 থেকে 75000 ফুলের দরকার হয়, যার কারণে জাফরান হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মসলার মধ্যে একটি | জাফরানের প্রতি কেজির মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় তিন থেকে চার লক্ষ টাকা |
জাফরান ব্যবহার করা হয় বেশিরভাগ খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য | এছাড়া জাফরান বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় |
তো চলুন এখন জানি জাফরান গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করা কি আমাদের জন্য নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় জাফরান(Saffron) গ্রহণ করা কি নিরাপদ ? উত্তর হল হ্যাঁ | কারণ জাফরানের প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণ রয়েছে যা গর্ভবস্থায় আমাদের বিভিন্ন অসুবিধা বা রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে | গর্ভাবস্থায় স্ট্রেচ, পেট ব্যথা ও মেজাজের বিভিন্ন পরিবর্তন হয়ে থাকে | তাই নিয়ম অনুসারে যদি জাফরান গ্রহণ করি গর্ভাবস্থায় তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব |
কিন্তু এই সময় যাই করি না কেন একটু ভেবেচিন্তে এবং নিয়ম অনুসারে করা ভালো |গর্ভাবস্থায় জাফরান এর যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এর কিছু বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে | যেমন অনিয়মিত বা অতিরিক্ত জাফরান গ্রহণ করার ফলে অকাল প্রসবের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় | তাই এ সময় আমাদের কিছু নিয়ম মাথায় রাখা উচিত–
1. অবশ্যই মনে রাখতে হবে গর্ভধারণের যখন চতুর্থ মাস শেষ হয়ে পঞ্চম মাস শুরু হবে ঠিক তখন থেকে জাফরান গ্রহণ করা যাবে | কারণ এই সময় অকাল প্রসবের কারণে বাচ্চার বিপদে পড়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে |
2. আপনি যখন খাবারের সাথে জাফরান ব্যবহার করবেন তখন পরিমান মত ব্যবহার করবেন | মাত্র দুটি থেকে তিনটি সূত্র ব্যবহার করতে পারবেন | অতিরিক্ত ব্যবহার করলে আপনার স্বাস্থ্যের উপর এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে |
3. জাফরান(Saffron) কেনার সময় অবশ্যই বুঝে শুনে দেখে আসল জাফরান কেনার ব্যবস্থা করবেন |
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য জাফরানের উপকারিতা গুলো কি কি (Benefits Of Eating Saffron During Pregnancy)?
1. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
জাফরানের পটাশিয়াম এবং ক্রোসটিন রয়েছে | গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার হার্টবিট এর হার 25 পার্সেন্ট হারে বৃদ্ধি পায় এর সাথে রক্তচাপ ওঠানামার সৃষ্টি হয় | আপনি যদি জাফরান ব্যবহার করেন তাহলে এতে যে পটাশিয়াম ও ক্রোসটিন রয়েছে তা আপনার এ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে |
2. হজমে সহায়তা করে
গর্ভবতী অবস্থায় একজন মহিলার হজম ক্ষমতা হ্রাস পায় | এবং এর সময় পেট ব্যথা বেড়ে যায় | নিয়ম অনুযায়ী জাফরান গ্রহণ করলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পাচনতন্ত্রের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করে | এতে করে উক্ত সমস্যা থেকে সহজেই সমাধান বা উপকার পাওয়া যায় |
3. মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করে
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার হরমোনজনিত অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে | যার কারণে বেশিরভাগ সময় মনমানসিকতা অনেক পরিবর্তন হয় | হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায় আবার হঠাৎ করেই খুব ভালো হয়ে যায় | আর এই সমস্যার সমাধান করতে পারে জাফরান | জাফরান এখানে এন্টি ডিপ্রেশন হিসেবে কাজ করে যা গর্ভাবস্থায় মহিলার মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহের সহায়তা করে যার ফলে আপনার মানসিকতা নিয়ন্ত্রণে জাফরান একটি ঔষধি গুণ হিসেবে কাজ করে |
4. সকালের অসুস্থ তাকে শান্ত করে জাফরান
গর্ভাবস্থায় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর একজন গর্ভবতী মহিলা অনেকটা নিজেকে অসুস্থ বোধ মনে করেন | তাই এই সময় যদি আপনি জাফরান চাপ গ্রহণ করেন তাহলে তা আপনার বমি বমি ভাব এবং মাথাব্যথাকে অনেকাংশে নির্মল করে দেয় সকালের অসুস্থতাকে দূর করতে সহায়তা করে |
5. হার্টের অসুখ থেকে রক্ষা
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে তাদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য | এতে করে তাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে | কিন্তু জাফরান হৃদরোগের একটি মহা ওষুধ হিসেবে পরিচিত | জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্রোসটিন এবং পটাশিয়াম গর্ভবতী মহিলার দেহের ট্রাই গ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে যার ফলে এই সমস্ত সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায় |
6. আয়রন বৃদ্ধি করা
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার বড় সমস্যা হচ্ছে আয়রন জনিত সমস্যা| জাফরানের (Saffron) প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে এই সমস্যা সমাধানের জন্য খুবই কার্যকরী |
7. চুল পড়া কমায়
গর্ভাবস্থায় আরও একটি সমস্যা হচ্ছে চুল পড়ার সমস্যা | এইসময় হরমোন জনিত বিভিন্ন কারণে প্রচুর পরিমাণে চুল পড়তে থাকে | জাফরান গ্রহণ করার ফলে এতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা চুলের গোড়া মজবুত করতে সহায়তা করে এবং চুলপড়া অনেকাংশে কমিয়ে দেয় |
8. ভালো ঘুমের জন্য জাফরান
গর্ভাবস্থায় ঘুমের অনেক ঘাটতি হয়ে থাকে | এই সময় বিভিন্ন কারণে গর্ভবতী মহিলা ঘুমানোর অনেক সমস্যায় ভোগেন | তাই জাফরান(Saffron) চা বা দুধের সাথে মিশিয়ে গ্রহণ করলে এটি এই সমস্যা থেকে অনেকটাই নিরাময় করে দেয় |
9. ত্বকের সমস্যা সমাধানে
গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন ব্রণ | জাফরান (Saffron)গ্রহণ করার ফলে ত্বকের এই সমস্যাগুলো থেকে সমাধান খুব সহজেই পাওয়া যায় | কারণ জাফরান ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের অনেক সহায়ক অনেকে দাবি করেন |
10. শিশুর চলাচলের অভিজ্ঞতা পেতে সহায়তা করে জাফরান
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র অনুসারে বলা যায়, জাফরান গ্রহণ করার ফলে দেহের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায় | ও এর ফলস্বরূপ আপনার দেহের অভ্যন্তরের যে শিশু রয়েছে তার চলাচল অনেকটা স্বাচ্ছন্দ চলে আসে, এবং তা আপনার শিশুর চলাচলের অভিজ্ঞতা পেতে সহায়তা করে |
গর্ভাবস্থায় কখন জাফরান(Saffron) গ্রহণ করবেন
জাফরান কে খুদা বুস্টার বলা হয় | এছাড়া জাফরান গ্রহণের ফলে হজমে সমস্যা সমাধান হয় | কিন্তু আপনি যখন গর্ভাবস্থায় জাফরান গ্রহণ করবেন তখন অবশ্যই এর পূর্বে আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন | কারণে সময়টা অনেক সেনসিটিভ | তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন কিছু করাটা ঠিক হবে না |
সাধারণত গর্ভাবস্থায় যখন পঞ্চম মাস শুরু হয় তখন থেকে আপনি জাফরান(Saffron) গ্রহণ করতে পারবেন | রাতের বেলা গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় না কারণ এই সময় আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলতে থাকে | ডাক্তাররা পরামর্শ করেন প্রতিদিন 10 গ্রাম এর চেয়ে বেশি জাফরান খাওয়া উচিত নয় কারণ এটি বেশি খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটা অনেক বেড়ে যায় | কিন্তু গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে অনেক টা সচেতন হতে হবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর গ্রহণ করতে হবে |
0 মন্তব্যসমূহ